অলিউর রহমান মেরাজ, নবাবগঞ্জ দিনাজপুর প্রতিনিধি : দিনাজপুর নবাবগঞ্জ উপজেলায় গত দেড় বছরে ৩১ জন নারী-পুরুষ গলায় ফাঁস ও বিষপানে আত্মহত্যা করেছেন। গত কয়েক বছরের তুলনায় শুধু এবারই নবাবগঞ্জে আত্মহত্যার সংখ্যা বেশি। প্রেমে ব্যর্থ, মান-অভিমান, পরকীয়া, অসচেতনতা, অশিক্ষা, পারিবারিক ঝগড়া-বিবাদ, আর্থিক অসচ্ছলতা, দাম্পত্য কলহ ইত্যাদি কারণে বেশির ভাগ আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে বলে পুলিশের কাছে করা এজাহার ও নবাবগঞ্জ থানায় অপমৃত্যুর নিবন্ধন তথ্যে পাওয়া গেছে।

নবাবগঞ্জ থানার অপমৃত্যুর রেজিস্টার সূত্রে এএসআই মিনহাজুল মিট্ট জানান, গত দেড় বছরে আত্মহত্যাকারী ৩১ নারী-পুরুষের মধ্যে নারী ১৩ ও পুরুষ ১৮ জন। সকলেই গলায় ফাঁস এবং বিষপান করে আত্মহত্যা করেছেন।আত্মহত্যার দিক থেকে নারীর চেয়ে পুরুষরা এগিয়ে। পুরুষের মধ্যে বেশির ভাগ আত্মহত্যাকারীদের বয়স ৪০ এর উপরে এবং নারীদের মধ্যে বেশির ভাগ আত্মহত্যাকারীদের বয়স ২০ এর নিচে।

এছাড়াও উপজেলায় অপমৃত্যু হয়েছে ২০ জনের মতো।তবে আত্মহত্যার অনেক ঘটনা পুলিশের নজরে আসে না। ঘটনার পর লাশ গোপনে দাফন করে ফেলে পরিবারের লোকজন। তবে চলতি বছরে একের পর এক আত্মহত্যার ঘটনায় জনমনে আতঙ্ক বেড়েছে কয়েক গুণ।

উপজেলার নলেয়া এলাকার মুশফিকুর রহমান প্রতিবেদককে বলেন,গত ২৪ সেপ্টেম্বর আমার মেয়ে মোসলেমা (১০) তার মায়ের সাথে বায়না ধরে মাঠে ফসল তুলতে যাবে। তখন মেয়েকে তার মা বাসায় থাকতে বলে, বাসায় থাকতে রাজি না হলে। ভয় দেখিয়ে বাসায় রেখে মাঠে গেলে, অভিমান করে আমার মেয়ে মোসলেমা গলায় ফাঁস নিয়ে আত্মহত্যা করে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনাকালে মানুষ নানা সংকটে দিন পার করছে। প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির মধ্যে বিস্তর ফারাক। ফলে হতাশাগ্রস্ত মানুষ নিজেই হত্যার প্রবণতায় ঝুঁকছেন।
ভাদুরিয়া এলাকার সমাজ সেবক গোলাম আযম মনির জানান, নবাবগঞ্জে আত্মহত্যা কমানোর জন্য ইউনিয়ন পরিষদ, মহল্লা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শ্রেণীকক্ষে আলোচনা ও সভা-সেমিনার করে সচেতনতা বাড়ানোর মাধ্যমে আত্মহত্যার প্রবণতা কমানো সম্ভব।নবাবগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ ফেরদৌস ওয়াহিদ জানান, গত ২০২০ সাল থেকে চলতি বছরের এই পর্যন্ত উপজেলায় বিভিন্ন বয়সের ৩১ জন ব্যক্তির আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে। এ থানায় আমি নতুন যোগদান করেছি অতিশীঘ্রই থানা পুলিশের পক্ষ থেকে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের পাড়া-মহল্লায় আত্মহত্যার প্রতিরোধে জনসচেতনমূলক প্রচারণা চালানো হবে। এছাড়াও অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের সাথে বন্ধু সুলভ আচারণ ও বিশেষ গুরুত্ব রাখলে আত্মহত্যা প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে।